গণতন্ত্র ফেরাতে ‘বিভেদ নয়, ঐক্যে’র আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচিত সংসদ ও নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে এক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা যেন বিভক্তির রাজনীতি না করি। এখন যেটা প্রয়োজন দেশকে বাঁচানোর জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরে পাবার জন্য আমাদের প্রয়োজন ঐক্য… স্ট্রাকচার তৈরি করেন… সংস্কার অবশ্যই লাগবে।’
‘কিন্তু সেই সংস্কারটা হচ্ছে যে, এর পেছনে যে শক্তিটা লাগবে সেটা হচ্ছে যে, নির্বাচিত পার্লামেন্ট, নির্বাচিত সরকার… এটা ছাড়া সংস্কারকে কখনো লেজিটেমেসি দিতে পারব না আমরা। এটা ফ্যাসিস্টরা পারবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আহ্বান জানাব, দেশের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষদেরকে, স্বাধীনতাকামী মানুষদেরকে যে, আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন… বিভাজিত হবেন না। আমি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের যারা যে যেখানে কাজ করছেন সবাইকে অনুরোধ করব বিভাজন সৃষ্টি করবেন না।’
‘আমি জানি না, কিছু মানুষ একেবারে যেন ডেসপারেট হয়ে গেছে যে, তারা দেশকে ভাগ করে ফেলবে, জনগণকে বিভক্ত করবে এবং বিভিন্ন রকম কথা বলছে, বিভিন্ন রকম উসকানিমূলক কথা বলছে… আপনারা দয়া করে সেগুলোর মধ্যে যাবেন না।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মিথ্যা মামলার শুনানিকালে আদালতে দেওয়া তার জবানবন্দির ওপর রচিত ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ শীর্ষক এই গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’ প্রকাশনা সংস্থার ৩০০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের মূল্য ২০০ টাকা।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান মুক্ত হবেন কিছুদিনের মধ্যে পুরোপুরি সব মামলা থেকে… তিনিও আমাদের মাঝে উপস্থিত হবেন ইনশাল্লাহ।’
‘আমাদের যে ত্যাগ, আমাদের জনগণের, আমাদের যুবকদের, আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের, আমাদের ছাত্রদের, আমাদের নারীদের… এটা কোনোমতেই বৃথা যাবে না, বৃথা যায়নি। আমরা অন্তত ফ্যাসিবাদকে সরাতে পেরেছি, ওদেরকে তাড়াতে পেরেছি…’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসিনা পালানোর পর থেকে আমরা কেন জানি নিজেদের মধ্যে পুরো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে পারছি না, ঐক্যের জায়গাটাতে থাকতে পারছি না। দেখুন না কী একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য। আরে ক্ষমতায় তো টিকে থাকবে তখনই, যখন তুমি এটাকে তুমি স্যাটেল করতে পারবে… তার জন্য আমরা বারবার বলছি সংস্কার… এই সংস্কার তো আমরাই শুরু করেছি, প্রথম সংস্কারের কথা বলেছি। জিয়াউর রহমান সাহেব প্রথম সংস্কার করেছেন, একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে এসেছিলেন।’
‘এই যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা… মাত্র চারটা ছাড়া সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল… জিয়াউর রহমান সাহেব এসে সব সংবাদপত্র খুলে দিয়েছিলেন, একটা বদ্ধ অর্থনীতি ছিল, সেখানে তথাকথিত ভ্রান্ত সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিকে বাদ দিয়ে সেখানে তিনি একটা মিশ্র বা মুক্ত অর্থনীতির মতবাদ নিয়ে এসেছিলেন। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন, সেই দর্শন ইটসেলফ সংস্কারের মূলকথা এবং ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল সংস্কারের বড় কর্মসূচি। আমাদেরকে এগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার লন্ডনে যেতে রাজকীয় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর জন্য কাতারের আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মুক্ত হয়ে চিকিৎসার জন্যে লন্ডনে গেলেন এবং গেলেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নিয়ে… তাকে সিঅফ করা হয়েছে… পথে পথে লাখো মানুষ বিদায় জানিয়েছে এবং তিনি আন্তর্জাতিকভাবে যে সম্মানটুকু পেয়েছেন… কোথাও বাধা পেতে হয়নি আমাদেরকে… আমরা যেখানেই বলেছি, আমাদের এই ভিসা দরকার, সঙ্গে সঙ্গে করে দিয়েছে।’
‘ম্যাডামের প্রতি সম্মানস্বরূপ কাতারের আমির যে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছেন, সেজন্য আমিরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি ধন্যবাদ জানাই ব্রিটিশ সরকারকে, তারা সেখানে তার লন্ডনে যাওয়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন এবং সেখানে আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবসহ যারা আছেন, তারা সেখানে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা শুরু করতে পেরেছেন।’
খুলনা গেজেট/ টিএ